টমাস টুখেল প্রমাণ করলেন তিনি ইউরোপের অন্যতম সেরা কোচ
টমাস টুখেল প্রমাণ করলেন তিনি ইউরোপের অন্যতম সেরা কোচ
ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ,২০২০। ই্উরোপ যখন ক্রিসমাস উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ঠিক তখনই টমাস টুখেলর জন্য প্যারিস সেন্ট জার্মেইর দরজা বন্ধ হয়ে যায়। প্যারিস সেন্ট জার্মেই চেয়ারম্যানের সাথে তার কোনভাবেই বনিবনা হচ্ছিলো না। প্যারিস সেন্ট জার্মেই টমাস টুখেলকে জানিয়ে দেয়, ক্লাবটির আর তাকে দরকার নেই। ক্লাব সভাপতি লিওনার্দো মনে করেন, টমাস টুখেল ইউরোপের এলিট কোচদের একজন নন ।
পিএসজি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর ১ মাস চাকরিহীন ছিলেন টুখেল। তারপরই ডাক আসে লন্ডন থেকে। ইংলিশ ক্লাব চেলসি তাদের কিংবদন্তি খেলোয়ার ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড যাকে তারা গত মৌসুমেই কোচ নিয়োগ দিয়েছিলো; তাকে ছাটাই করেছে। তারই ¯থলাভিষিক্ত করতে চায় টুখেলকে। নিজ শহর বাভারিয়া থেকে উড়ে এসে চেলসির হাল ধরেন মেইন্জ, বুরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও প্যারিস সেন্ট জার্মেইর সাবেক এই জার্মান কোচ।
আসলাম, দেখলাম, জয় করলাম। চেলসিতে এসেই ইউরোপ জয় করলেন টমাস টুখেল। টুখেল গত মৌসুমেও পিএসজিকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে তুলেছিলেন কিন্তু হান্সি ফিœকের উড়ন্ত বায়ার্ণ মিউনিখের কাছে হেরে শিরোপা স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয় তাকে। কিন্ত এবার আর হতাশ হতে হয় নি। ফাইনালে তিনি পরাজিত করেন পেপ গার্দিওয়ালার ম্যাঞ্চাস্টার সিটিকে। পেপ তার্কাতিত ভাবেই ইউরোপের সেরা কোচ। টুখেলের কৌশলের কাছে পেপ টিকতেই পাড়েননি।
ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড চেলসির হয়ে মেীসুমটা প্রাত্যাশিত ভাবে শুরু করতে পারেননি। চেলসি ছিল তারকায় ঢাসা। চলতি মৌসুমে দারুন কিছু খেলোয়াড়ও দলে ভিড়িয়েছিলেন ফ্র্যাঙ্ক।কিন্তু তাদেরকে সঠিকভাবে ব্যাবহার করে কিভাবে সেরাটা বের করে আনতে হবে তা কিছুতেই বুঝে উ্ঠতে পারছিলেন না তিনি।চেলসি ছিলো পয়েন্ট তালিকার ৯ম অবস্থানে। অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের দ্বিতীয় রাউন্ডে আতলেতিকো মাদ্রিদের কাছে প্রথম লেগে হেরে বিদায়ের ঘন্টা কানে বাজছিলো চেলসির। এই অবস্থায় চেলসি আর ভরসা রাখতে পারেনি ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের উপর।
ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের বদলি হিসেবে চেলসির প্রথম পছন্দ ছিলেন টমাস টুখেল। টুখেল অবশ্য মৌসুমের মাঝামাঝিতে চেলসির দায়িত্ব নিতে দ্বিধান্বিত ছিলেন। তবে চেলসিকে সামলানোর জন্য তিনিই যোগ্য ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি তারকা খেলোয়াড়দের আসলটা বের করে আনতে পারেন। তার ১৫ বছরের কোচিং অভিজ্ঞতা; একেবারে নবীনও নয় আবার প্রবীনও নয়।প্রতিটি ম্যাচ বুঝতে পারা ও আর চেলসির তিন তরুন খেলোয়াড় টিমো ভেরনার, কাই হাভর্তস ও ক্রিস্টিয়ান পুলেসিকের মত তরুনদের সঠিক ভাবে ব্যবহারের জন্য তিনিই ছিলেন উপযুক্ত।
চেলসি দ্রুতই তার প্রভাব পেতে শুরু করলো। দলে যোগ দেওয়ার পরই তিনি দলকে নতুন করে গোছানো ও খেলার ধরন পাল্টে ফেললেন।সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনলেন রক্ষণভাগে। তিনজন সেন্টারব্যাক সাথে দুইজন উইংব্যাক খেলানো।এর মাধ্যমে রক্ষণভাগের দুর্বলতা দূর হয় আর দ্রুত প্রতি আক্রমণে যাওয়া যায়। ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের সময়ে ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন দলপতি সিসার অজিপুলিকুয়েতা। টুখেল পুনরায় তাকে রক্ষণভাগে নিয়মিত করেন । যার প্রতিদান সরুপ সিসার ৩০ ম্যাচে ১৯ ক্লিনসিট যার একটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে; উপহার দিয়ে কোচের আস্থার প্রতিদান দেন।
চেলসির কোচ হিসেবে প্রথম টানা ১৩ ম্যাচে অপরাজিত থেকে নজির গড়েন যা অন্য কোন কোচ পারেন নি। এর মধ্যে একটি ম্যাচ হচ্ছে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের দ্বিতীয় রাউন্ডের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ । যেটিতে জিতে চেলসি কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে। টুখেল ইউরোপের সেরা সেরা কোচদের পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন। পেপ গার্দিওলা, হোসে মোরিনও, জিনেদিন জিদান, ইয়ের্গুন ক্লপ,ডিয়েগো সিমিওনি, কার্লো আনচেলত্তির দলগুলো তার কাছে নাস্তুনাবুদ হয়। তাদের বিপক্ষে চেলসি মাত্র দুইগোল হজম করে।
টুখেলের প্রধান অস্ত্র ছিলো দল নির্বাচন ও ম্যাচ বাই ম্যাচ ট্যাকটিকস্ সাজানো। যা প্রতিপক্ষ দলের কোচরা সহজে বুঝে উঠতে পারতেন না। তার প্রথম ১০ ম্যাচে শুরুর একাদশে ৩৯ টি পরিবর্তন আনেন। এটা বলা হয়ে থাকেযে তিনি যখন লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তখনই তার অধীনে চেলসি দলটি কোন ফরম্যাশনে খেলবে তা তিনি পরিকল্পনা করেন। তিনি যে দলটি পাচ্ছেন তার যোগিক ব্যাবহার করতে পারলে কাঙ্খিত সাফল্য পাবেন, এটা তিনি নিশিÍত ছিলেন। সেটা করেও দেখিয়েছেন। এফএ কাপ ফাইনালে যদিও লেস্টার সিটির কাছে তারা দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হেরে গিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের আগেই তারা আগামি মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ গ্রæপ পর্ব নিশ্চিত করেছিলো। যা প্রায় অসম্ভব ছিলো।
যেহেতু মৌসুম শেষ চেলসির মৌসুমটি অনেক ঘটনাবহুল ছিলো। চেলসির গোলকিপার এডয়ার্ড মেন্ডি যিনি সাত বছর আগে চাকরিহীন ছিলেন, ন’গলে কন্তে ব্যালন ডি ওর জয়ের দৌড়ে এগিয়ে আছেন, ক্লাবের রেকর্ড সাইনিং কাই হাভাতস যিনি চ্যাম্পিয়ন্স লীগে তার প্রথম গোল করলেন সেটাও আবার ফাইনালে,ক্লাবের ইয়ুথ প্রডাক্ট মেসন মাউন্ট এই মৌসুমে চেলসির সেরা খেলোয়ার নির্বাচিত হয়েছেন।শুণ্য থেকে ইউরোপের রাজা বানিয়ে টুখেল লšডনে নায়ক বনে গেছেন। ২০১৩ সালের চেলসির চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয় যদি বিষ্ময় হয় তবে ২০২১ সালেরটা তার চেয়ে কম কিছু নয়।


No comments