অলিম্পিক ফুটবলের ফাইনালঃ লাতিন বনাম ইউরোপের লড়াই

 অলিম্পিক ফুটবলের ফাইনালঃ লাতিন বনাম ইউরোপের লড়াই 

কবির এম হোসেন 



লাতিন ফুটবলে আর আগের ছন্দ নেই! দিনে দিনে ক্ষয়ে যাচ্ছে লাতিন ফুটবল! অন্যদিকে ইউরোপের ফুটবল হচ্ছে আরো বেশি সমৃদ্ধ ও উপভোগ্য।চলতি বছরে একই সময়ে কোপা আমেরিকা ও ইউরো কাপ হওয়ায় এই কথাগুলো খুব চাউড় হয়েছে ফুটবল প্রেমীদের মনে।আজ তার একটি ছোট্ট পরীক্ষা হয়ে যাবে। অলিম্পিক ফুটবলের ফাইনালে আজ মুখোমুখি হচ্ছে লাতিন পরাশক্তি ব্রাজিল আর ইউরোপে টিকিটাকার জনক স্পেন।


২০২১ সালটাই মূলত বিলম্বিত ফুটবল আসরের বছর। যে আসরগুলো হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে সেগুলো হচ্ছে ২০২১ সালে। অলিম্পিক ফুটবলে অংশগ্রহণ করে অনুর্ধ-২৩ দল । কিন্তু এক বছর বাদে অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রতিটি দলই খেলেছে অনুর্ধ- ২৪ দল নিয়ে। এছাড়াও প্রতিটি দলে থাকছে ৩ জন করে সিনিয়র খেলোয়াড় যাদের বয়স ২৪ বছরের বেশি। 


টোকিও অলিম্পিককে সামনে রেখে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল যখন খেলোয়াড়দের নামের তালিকা ঘোষনা করছিল, তখনই আন্দাজ করা গিয়েছিল স্বর্ণ পদক ধরে রাখার আশায়ই দল সাজিয়েছে ব্রাজিল। আর স্পেন দল সাজিয়েছে ইউরো কাপের দুঃখ ঘুচাতে। সেদিক দিয়ে তারা আপাতদৃষ্টিতে সফল। দুটি দলই সোনার আশায় আজ টোকিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে লড়াই চালাবে।


বিশ্বব্যাপী ব্রাজিলের সমর্থক যেমন বেশি সমালোচকও তেমনি বেশি। দুনিয়ায় যে যত বেশি সফল তার সমালোচক সবসময়ই বেশি থাকে। বিশ্বকাপ, কনফেডারেশন কাপের পর অলিম্পিক ফুটবলেও কিন্তু পদক জয়ের দিক দিয়ে ব্রাজিলই সবচেয়ে বেশি সফল। 


সোনা,রুপা ও ব্রোঞ্জ মিলিয়ে অলিম্পিক ফুটবলে বেশি পদক ব্রাজিলের। অলিম্পিকে অধরা সোনার পদকটি তারা গলায় ঝুলিয়েছে ২০১৬ সালে, রিও অলিম্পিকে।তারাও খুব করে চাইবে তাদের গলা থেকে যেন স্পেন সেই সোনা কেড়ে নিতে না পারে। 


খেলার জায়গা হিসেবে জাপান ব্রাজিলিয়ানদের প্রিয় দেশই হওয়ার কথা। এই জাপানেই ২০০২ সালে জার্মানিকে হারিয়ে পঞ্চম ও  তাদের সর্বশেষ বিশ্বকাপটি জিতেছিল রোনালদো,রিভালদো, রোনালদিনহো, রবার্তো কার্লোসরা। তাদের উত্তরসূরী হয়ে ব্রাজিলের নতুন প্রজন্ম চাইবে সোনার পদক জয় করে কিংবদন্তীদের মান রাখতে। 



স্পেনের হাতে থাকবে ইউরোপের প্রতিনিধিত্বের পতাকা। বিশ্বফুটবলে স্পেনের সাফল্য মোটেও ঈর্ষণীয় নয়। তবে বিশ্ব ফুটবল ঝাঁকি দিয়ে ফুটবলে নতুনত্ব কিন্তু স্পেনই এনেছিল । পাসিং ফুটবলকে এক নতুন রুপ দিয়েছিলে তারা, যেটা টিকিটাকা নামে পরিচিতি লাভ করে। 


টিকিটাকার ফসল ঘরেও তুলেছে তারা। একটি বিশ্বকাপ, দুইটি ইউরো কাপ জয়ের সাথে সাথে কমিউনিজমের মত তাদের এই ফুটবল মতাদর্শ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিল। তাদের দেখানো পথে হেঁটেই ইউরোপের অন্যদেশ জার্মানিও কিন্তু তাদের চতুর্থ বিশ্বকাপটি জেতে। 


অলিম্পিক ফুটবলে স্প্যানিশদের একটিই পদক, সেটাও সোনা। পদকের ধারে কাছে আর যেতে পারেনি তারা। ক্যাসিয়াস ,জাভি, তোরেসদের উত্তরসূরীরা চাইবে আরও একটি পদক গলায় ঝুলাতে। সোনার পদক জয়ের অভিজ্ঞতা তাদের যেহেতু আছে আরো একটি সোনার পদক তারা চাইতেই পারে!!!


ছোট্টদের দল দিয়ে মহাদেশীয় ফুটবলকে হয়ত সঠিক ভাবে বিচার করা যাবে না কিন্তু ব্রাজিল ও স্পেন স্কোয়াড ঘেটে দেখলে কিন্তু আমরা সে আশা করতে পারি। ইউরোপ ও লাতিনের বাইরে নিরপেক্ষ ভেণ্যু হিসেবে এশিয়ার দেশ জাপানে দুই মহাদেশীয় পরাশক্তির লড়াই দেখতে অনেকেই উন্মুখ হয়ে থাকবে।

No comments

Auto Scroll Stop Scroll