এই লজ্জা রাখি কোথায়?
এই লজ্জা রাখি কোথায়?
লেখক- কবির এম হোসেন
তাসকিন আহমেদের বলে ডিপ মিড-ইউকেটের উপর দিয়ে বল মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিলেন পাকিস্থানি ব্যাটসম্যান সাদাব খান। গ্যালারি থেকে ভেসে আসলো হর্ষ ধ্বনি। অনেকের হাতে আবার পাকিস্থানের পতাকাও রয়েছে। পাকিস্থানের ব্যাটসম্যানরা যখনই বাংলাদেশের বোলারদের কচুকাটা করছেন ঠিক তখনই মিরপুরের শের-ই-বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে একদল সমর্থক উল্লাসে ফেটে পরছেন। খুব ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখা গেল পাকিস্থানি এই সমর্থক গোষ্ঠী বাংলাদেশেরই জনগণ। পাকিস্থানি গোটা কয়েক দর্শকও গতকাল মিরপুরে ছিলেন তবে তবে আনুপাতিক হারে তাদের সংখ্যা ছিল খুব নগণ্য। তাদের চিৎকার সকলের নজরে আসার মত ছিল না। তবে পাকিস্থানিদের হয়ে স্বদেশীদের চিৎকার ও উল্লাস কিন্তু অনেকেরই নজরে আসল।
জাতি হিসেবে আমাদের মানসিক দৈণ্য দশা যে এখনো কাটেনি সেটা অনেক আগেই শত শত বার প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের তৃনমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনেক কর্তাব্যাক্তি পর্যন্ত সময় সুযোগ বুঝে, নিজের স্বার্থ ও লোভ হাসিল করার জন্য দেশে ও দেশের বাইরে নিজেকে বিজাতীয় বলে পরিচয় দিতে সম্মান বোধ করেছে। রাজনীতিবিদ থেকে ব্যবসায়ী, অভিনেতা থেকে সাধারন জনগন তারা ভিনদেশীর পা চাটাতে একধরনের স্বর্গ সুখ অনুভব করে। রাজনৈতিক বক্তব্যে, পার্ঠ বইয়ের পাতায় পাতায় , রেডিও টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে দেশ প্রেম উথলে উঠে । দেশ প্র্রেম সবচেয়ে বেশি উথলে উঠে ফেসবুকে।একদল ভন্ড সবকিছুর মধ্যে দেশপ্র্রেম দেখিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য বিশেষ ধ্বনি তুলে । আবাল জনতা সেই ধ্বনিকে কোন প্রকার যাচাই বাছাই না করে লাফ পারতে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এ দেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে প্রকৃত দেশেপ্রেমের ঘাটতি রয়েছে। তাদের মধ্যে দেশপ্রেমের ঘাটতি প্রকাশ পায় তাদের কাজে-কর্মে। দেশপ্রেম এত সস্তা না।
ভারত ও পাকিস্থানের প্রতি এদেশের দুই দল মানুষের বিশেষ একধরনের দুর্বলতা রয়েছে। সেটা শুধু খেলার মাঠে নয়।অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়ই বাংলাদেশের সেই দুই দল ইতর বাদানুবাদ, তর্ক ও ঝগড়াঝাটিতে লিপ্ত হয়। তাদের সেই তর্ক প্রায়ই হাতাহাতি ও রক্তারক্তিতে রুপ নেয়। তবে খেলার মাঠে তাদের সেই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি সবার সামনে আসে । এসময়ে তারা তাদের ইতরামি আর লুকিয়ে রাখেতে পারে না। তা নাহলে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলায় তারা ভারত কিংবা পাকিস্থানের পতাকা হাতে নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষ দলকে সমর্থন দিতে পরতো না। মিরপুরকে এর আগের ভারত এবং পাকিস্থানের স্টেডিয়াম বলে মজা করা হয়েছে। বাংলাদেশের দর্শকদের বাংলাদেশ ব্যতিত অন্য কোন দেশের পতাকা নিয়ে যেতে নিষেধ্জ্ঞা জাড়ি করা হয়েছে। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অভ্যাস,স্বভাব আর মন এত সহজে বদলায় না । কবে এই লজ্জা থেকে বাংলাদেশ নামক ভূ-খন্ডটি কবে মুক্তি লাভ করবে, সেই আশায় বসে থাকবে ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার যায়গা।
No comments