রোনালদোর গোলে দ্বিতীয় রাউন্ডে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড
রোনালদোর গোলে দ্বিতীয় রাউন্ডে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড।
চ্যাম্পিয়নস লিগের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে জয় পেয়েছে ধুঁকতে থাকা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। গতকাল স্প্যানিশ ক্লাবটির ঘরের মাঠে তাদেরকে ২-০ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে ফেলেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো- হ্যারি ম্যাগুয়েররা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি তারা ড্র করলে বা হেরে গেলেও পরের রাউন্ডে যেতে তাদের কোন ঝামেলই পোহাতে হবে না।
মাত্র ৩দিন আগেই ইংলিশ ক্লাবটির প্রধান প্রশিক্ষক ওলে গুনার সুলশার বরখাস্থ হয়েছেন।সুলশারের জায়গায় অর্ন্তবর্তিকালীন কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন তারই সহকারী হিসেবে কাজ করা ম্যাইকেল ক্যারিক। প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে তাদের যাচ্ছে তাই অবস্থা। মনে আশান্তি আর মাথায় প্রবল চাপ নিয়ে নিজেদের মান বাঁচাতে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে খেলতে স্পেনে উড়াল দিয়েছিল রেড ডিফিলসরা। তবে সেই চাপ ভাল ভাবেই সামাল দিলেন চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো,এই মৌসুমে ইউনাইটেডে যোগ দেওয়া ইংলিশ তরুন খেলোয়াড় জেডন সাঞ্চো ও তাদের সতীর্থরা।
মাইকেল ক্যারিক ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে দলকে সাজিয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দিয়েছিলেন সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ডের দায়িত্ব। তাকে বল জোগান দেওয়ার জন্য ছিলেন এন্থনি মার্শিয়াল, জেডন সাঞ্চো ও ভ্যান ডি বিক। ভিয়ারিয়াল কোচ উনাই এমরির কাছে ইউনাইটেড খুব বেশি অপরিচত প্রতিপক্ষ নয়। তিনি একটা সময় ছিলেন ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের কোচ। গ্রুপ পর্বের প্রথম লেগে ইংল্যান্ডে গিয়ে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইউনাইটেডের বিপক্ষে প্রায় জয় তুলে নিয়েছিল তার দল। তবে সেবার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর শেষ সময়ের গোলে ড্র করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়েছিল এমরিকে। এবার তিনি ঘরের মাঠে দলেকে সাজালেন ৪-৪-২ ফর্মেশনে। দুর্দশতায় জর্জরিত ইউনাইটেডের বিপক্ষে জয় তুলে পূর্ণ পয়েন্ট অর্জনই ছিল তার প্রত্যাশা।
ম্যাচ শুরুর পরপরই ভিয়ারিয়ালে ডি-বক্সের সামান্য দূরে ফ্রি-কিক পেয়ে যায় ইউনাইটেড। হ্যারি ম্যাগুয়েরের নেওয়া শটে সঠিক ভাবে মাথা স্পর্শ করাতে পরেননি রোনালদো। ফিরতি বলে ম্যাকটমনি হেড দিলেও তা বারের বাইরে দিয়ে যায়। উল্টো ২৬ মিনিটে ভিয়ারিয়ালই প্রায় গোল পেয়ে গিয়েছিল। ইয়ারিমানু পিনুর বাড়ানো বল হঠাৎ করে শট নেন মানু ট্রিগোরাস। তবে ইউনাইটেড গোলকিপার ডেভিড ডি হায়ার অসাধারন সেভে সে যাত্রায় রক্ষা পায় ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। ৩০ মিনিটে এলেক্স টেলেসের বাড়ানো বলে রোনালদোর দুর্বল হেড ভিয়ারিয়াল গোলকিপার খুব সহজেই লুফে নেন। ৩২ মিনিটে আবার ফ্রিকিক পায় ইউনাইটেড। আবার ভিয়ারিয়ালে ডি-বক্সের একদম সামনে। এবার শট নেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তবে তার শটেও কোন কাজ হয়নি। প্রথমার্ধ গোল শূণ্যভাবেই শেষ হয়। কোন দলই গোলের ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। ৬০মিনিটে ভিয়ারিয়াল প্রায় গোল পেয়েই গিয়েছিল। ইউনাইটেড গোলকিপার ডেভিড ডি হায়া আবার ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ন হন। মানু ট্রিগোরাসের অকষ্কিক শট আবার রুখে দেন ডি হায়া। ৭০মিনিটে ইউনাইটেডকে এগিয়ে দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। কোচ যেই হোন, প্রতিপক্ষ যে দলই হোক না কেন, রোনালদোর পা সবসময় হেঁসে উঠে। মিডফিল্ডার ফ্রেডের বাড়ানো বলে অসধারন এক চিপ করেন রোনালদো। বিয়ালিয়াল গোলকিপারের তাকিয়ে তাকিয়ে সে গোল দেখাছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। ৯০ মিনিটে ইউনাইটেডের লিডি দিগুন করেন জেডন সাঞ্চে। ইউনাইটেডের হয়ে তার প্রথম গোলটি স্মরণীয় হয়ে থাকল। পূর্ণ ৩ পয়েন্ট পেয়ে তার দল চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে গেল।
ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে জয়ে গ্রুপ এফ’এ ৫ ম্যাচ শেষে ১০ পয়েন্ট হয়ে গেল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের। জয়ে ইংলিশ ক্লাবটির প্রাণও যেন ফিরে এল। অর্ন্তবর্তীকালীন কোচ ম্যাইকেল ক্যারিক জয়টিকে বরখাস্থ হওয়া কোচ ওলে গুনার সুলশারের জন্য জয় বলে উল্লেখ করেছেন। দলে ওলের জন্য কতটা ভালোবাসা তার একথাতেই বোঝা যায়। ক্যারিক আরো বলেন-
”বিগত কয়েকটি দিন আমাদের জন্য মোটেও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক ছিল না।এ জয় আমাদের মনে প্রশান্তি দিবে আর এটা এরকম মনে হচ্ছে যে, জয়টি ওলের জন্য।”
No comments