সিংগাইরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ

 সিংগাইরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ




অপরদিকে দখলে অস্তিত্ব বিলিনের পথে সরকারি খাল


সাইফুল ইসলাম তানভীর, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতাঃ হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ মহাসড়কে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা অবৈধ ভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের চোখের সামনে। মনে হচ্ছে দেখলেও যেন তাদের কিছুই করার নেই। বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়ক আইন অনুযায়ী কোনো সড়ক বা মহাসড়কের ৩০ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু সে আইনের প্রতি কারো কোন তোয়াক্কা নেই ।

ভাষা শহিদ রফিক সেতুর পশ্চিম প্রান্তে সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ধল্লা পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন দক্ষিণ ধল্লা এলাকায় সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গায় অবৈধভাবে দোকান ঘর ও স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করে আছে কতিপয় ক্ষমতাধর দখলদার। দখলদারদের ক্ষমতার দাপটে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। শুধু তাই নয়, অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন দোকানিরা। এছাড়া অধিগ্রহণকৃত জায়গাই একটি পুলিশ ফাঁড়ি এবং ফাঁড়ি পুলিশের তত্ত্বাবধানে একটি মসজিদও নির্মাণ হয়েছে।

জানা গেছে ১৯৯৫-৯৬ সালে হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ মহাসড়ক বর্ধিত করণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে সুদক্ষিরা মৌজা থেকে ৩.৬২ একর এবং ধল্লা মৌজা থেকে ৩.১৫ একরসহ মোট ৬.৭৭ একর বা ২০.৪৮ বিঘা (৬৭৭শতাংশ) জমি অধিগ্রহণ করা হয় যার এল.এস কেইস নং ৬/৯৫-৯৬। এরপর কয়েক দফায় সড়কটি বর্ধিত করা হলেও রফিক সেতুর পশ্চিম প্রান্তের খান ফুড থেকে এ‍্যাসপায়ার গার্মেন্টসর গেইট পর্যন্ত স্থানটিতে অধিগ্রহণকৃত জায়গার বড় একটি অংশ ফাঁকা পড়ে ছিল দীর্ঘদিন। গেল প্রায় দু'বছর পূর্বে স্থানীয় মো. ফজলুর রহমান, মো. লাবু মিয়া, মো.সোবান শাহ, মোসা. দিলরুবা, ইসমাইল হোসেন, মো. নান্টু, মোঃ সাইফুল ইসলাম, মো. সোহেল ও মো.আলিম টিনের ও আঁধা পাকা ঘর নির্মাণ করে অন‍্যদের কাছে অর্থের বিনিময়ে ভাড়া দিয়েছে। স্থাপনা নির্মাণ করে দখলককৃত জায়গার পিছনে এখনো অবশিষ্ট জায়গা রয়েছে যার শেষ প্রান্তেই  সড়ক ও জনপথ বিভাগের সিমানা পিলার রয়েছে ।

এছাড়াও সরেজমিনে দেখা যায়, হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ মহাসড়কের দক্ষিণ দিকের পাশ ঘেঁষে ধলেশ্বরী নদী হতে পশ্চিমে বায়রা ইউনিয়নের গাড়াদিয়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার একটি খাঁদ প্রবাহিত। খাঁদটির রেকর্ড-পর্চা অনুযায়ী আয়তন প্রায় ৮৪ একর। এর মধ্যে ৪৩.৫৪ একরের মালিক জেলা প্রশাসক, ২০.৭১ একরের মালিক জেলা পরিষদ এবং ১৯.০১ একরের মালিক ঢাকা জেলা বোর্ড। এ খাঁদের অনেক স্থান দখল হওয়ায় সংকুচিত হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সড়কটির গাড়াদিয়া, হাসাননগর, বাইমাইল,কালীনগর, সানাইল, কাশিমনগর, দেউলী, জয়মন্টপ,ভাকুম, জায়গীর,বাস্তা ও বিন্নাডাঙ্গীসহ স্থানগুলোতে অনেকেই খাঁদের সরকারি অংশ দখল করে নির্মাণ করেছেন বানিজ‍্যিক শিল্প কারখানা,বসত বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, টয়লেটের সেপটি ট‍্যাংকি, মুদি দোকান ও খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। প্রশাসনের সরাসরি চোখের সামনে এ সব দখলদারি চললেও তাদের নিরব ভুমিকায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানামুখি প্রশ্ন।

এমনিতেই সড়কটিতে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন অগণিত মানুষ । তার ওপর এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও খাবার হোটেলের সামনে পার্ক করে রাখা বিভিন্ন যানবাহনের লম্বা লাইনের কারণে চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেকেই ওই স্থানগুলোতে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিন্নাডাঙ্গী এলাকার জনৈক ব‍্যক্তি বলেন,দখলদারদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারি দলের ক্ষমতাধর লোক হওয়ায় সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায়না। আবার অন‍্যান‍্য স্থানে অনেকেই এদের দেখাদেখি দখলে উৎসাহি হচ্ছে। তাই অতিসত্তর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানান তিনি।

দখলদারদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সরকারি জমি পড়ে থাকে। এ কারণে আমরা দোকানপাট তৈরি করেছি। স্থাপনা নির্মাণে আমরা সওজ এর কাছ থেকে কোন অনুমতি নেইনি। এসব দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদের ব‍্যাপারে সওজের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি বলে জানান তারা। তবে কর্তৃপক্ষ না চাইলে তারা দোকান তুলে নেবেন বলে জানান।

সড়কের দক্ষিণ পাশের জায়গা বেদখল প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দূর-রে-শাহওয়াজ বলেন, এটি দৃশ্যত সরকারি খাল মনে হলেও  বেশির ভাগ জায়গা ব‍্যক্তি মালিকানাধীন রেকর্ডিয় সম্পত্তি। আবার বতর্মানে কিছু কিছু জায়গায় লিজ প্রদান কার্যক্রম চলমান। তারপরও কোথাও কেউ যদি সরকারি জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে থাকে তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্থা নিবো।

সড়ক বিভাগের বেদখল হওয়া জায়গা প্রসঙ্গে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপন দেবনাথ বলেন, যেহুতু  দখল হওয়া জায়গা সওজ এর তাই প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্থা নিতে আমি তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করবো।

এ ব‍্যাপারে মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গাউস-উল-হাসান মারুফ বলেন, বেদখল হওয়া জায়গা মানিকগঞ্জের সীমানায় হলেও ওই অংশটুকু ঢাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তাই এ বিষয়ে তারাই ব‍্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শামীম আল মামুন বলেন, বিষয়টি আপনার কাছে থেকে জানলাম। সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্থা গ্রহন করবো।


বার্তা প্রেরক

মোঃ সাইফুল ইসলাম তানভীর

সিংগাইর, মানিকগঞ্জ।

মোবাইল-০১৭১৬ ৪৪৪ ২৭৪

তারিখ-১১-০৫-২০২২ ইং

No comments

Auto Scroll Stop Scroll