আত্ম হনন কোন সমাধান নয়
আত্ম হনন কোন সমাধান নয়ঃ
যে প্রাণটা আজ ঝরে গেলো তার জন্য দুঃখ প্রকাশ ছাড়া কিই বা করার আছে!
আসলেই কি কিছু করার ছিল না? আজ রিয়ান গলায় ফাঁস দিয়ে আমাদের জানান দিল পরিবার, সমাজ, বন্ধু বান্ধব কিছুই তার কাছে গুরত্বপূর্ন ছিল না! কিন্তু কেন?
এ রকম তো হবার কথা নয়?
আমি এখনও জানি না ছেলেটা কি অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে চলে গেল তার পরিবার, বন্ধু বান্ধব, গর্ভধারীনি মাকে ব্যথার সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে।
রিয়ান শুধু একা নয়। দেশের কোথাও না কোথাও এই বয়সের ছেলে মেয়েদেরকে প্রতি দিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কি কিছুই করার নেই?
আমরা, বাবা মা, শিক্ষক, সমাজের প্রত্যেকটি মানুষেরই এর মূল কারণ খুঁজে বের করা দরকার।
এই ১৬- ১৭ বছর ছেলে মেয়েদের আবেগটা অনেক বেশি। আবেগ কন্ট্রল করাটা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় অনেকের হয় না।
আমরা যদি ওদের সাথে মিশে ওদের মন বোঝার চেষ্টা করি তাহলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। ছেলে মেয়েদের সাথে বাবা মা এর উচিত বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক রাখা। ওরা যেন খুব সহজে ওদের সমস্যাগুলো বাবা মায়ের কাছে নি:সংকচে বলতে পারে এরকম পরিবেশ তৈরি করা।
একটু চিন্ত করে দেখুন ও যখন গলায় ফাঁস দিচ্ছে ওর হয়ত মনে হয়েছে পৃথিবী ওর কথা শোনবার মত একটি বন্ধু, একজন মানুষও নেই। যদি কেউ থাকত তাহলে ওর নিজের সিদ্ধান্তটা নিয়ে কথা বলতে পারত।
আমাদের উচিত ছেলে মেয়েদের সাথে মেশা। ওরা কার সাথে মিশছে কোথায় যাচ্ছে এগুলো খেয়াল রাখা। ওরা যা চায় ওদের চাওয়ার সাথে ঐ জিনিসটা বয়সের সাথে যাচ্ছে কিনা তা দেখা এবং সুন্দর করে বুঝিয়ে বলা।
ছেলে মেয়েদের বিঘরে যাওয়ার হাতিয়ার আমার নিজেরাই তাদের হাতে তুলে দিচ্ছি। কোভিড ১৯ এর কারণে অনলাইনে স্কুল কলেজের এ্যাসাইনমেন্টের নামে তাদের হাতে তুলে দিয়েছি স্মার্ট ফোন। ফলে কি হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের হাতে হাতে চলে গিয়েছে এই ফোন।
এরা পড়াশোনার নামে মোবাইলে এমন আসক্ত হচ্ছে যে বইয়ের নিচে মোবাইল রেখে দিচ্ছে। আপনার বাচ্চাকে একা রুমে দরজা বন্ধ করে কখনও পড়তে দিবেন না। আপনি মনে করছেন ওরা পড়াশোনা করছে কিন্তু বই এর নিচে যদি মোবাইল থাকে। পড়ার কোন সুযোগই থাকবে না তার জন্য। আমি এমনো দেখেছি বাবা মার সাথে ছেলে মেয়েরা এমন করে আড়ি করে তাকে ২০- ২৫ হাজার টাকার স্মার্ট ফোন না দিলে আবেগের বশে হরেক রকম কান্ড করে বসে। আপনি যদি সন্তানকে ছুটো থেকে তাকে অভাব বুঝাতে পারেন তাহলে ধীরে ধীরে সে মানুষ হয়ে ওঠবে। এটা যদি আপনি না পারেন তাহলে একটা সময় আপনার সন্তান আপনার কথা শুনবে না।
প্রত্যেক মা বাবার কাছেই তার সন্তান সবচেয়ে দামী। কিন্তু আপনার সন্তান বিগড়ে যাবার সব পথ আপনি করে দিছেন না তো?
সন্তানকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কখনও কিছু দিবেন না।পারত পক্ষে কম দিবেন।
সরকার এর প্রজ্ঞাপন রয়েছে ছালে মেয়েদের ইন্টারমেডিয়েট শেষ করার আগে মোবাইল না দেবার জন্য। কিন্তু আমরা অবিভাবকরা কি তা মানছি?
এই মোবাইল তাদের হাতে তুলে দিচ্ছি ছয় মাস বয়স হতেই। আপনারা বলেন বাচ্চা মোবাইল না দিলে কিছুই খায় না। দুই একদিন না খাক! দুই একদিন পর ঠিক হয়ে যাবে। আজ হয়ত খাবে না। কাল খাবে নয়ত পরশু খাবে। খাওয়ার জন্য আপনি অন্য টেকনিক অবলম্বন করতে পারেন।
আমরা আর কোন রিয়ানকে এভাবে চলে যেতে দিতে দিতে পারি না!
রিয়ান তুমি আমাদের মাফ কর।
আল্লাহ তোমাকে মাফ করুক!
লেখকঃ
ফরিদ খান অমিত
প্রভাষক,
গোলাইডাঙ্গা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কলেজ, সিংগাইর, মানিকগঞ্জ।
No comments