বেলজিয়াম বনাম ইতালিঃ ইতালির রক্ষণ নাকি বেলজিয়ামের আক্রমণ?
ইতালির রক্ষণ ঐতিহাসিক ভাবে শক্তিশালী। ফাবিও ক্যানভারো, পাওলো মালদিনির উত্তরসূরীরা বারাবরই আক্রমণের তুলনায় রক্ষণকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার ছক কষে থাকে। যার ছাপ ইতালির সাম্প্রতিক সাফল্যেও রয়েছে। টানা ১৯ ঘন্টা ২৮ মিনিট নিজেদের গোলবার সুরক্ষিত রেখেছিলো লিওনার্দো বনুচ্চি, জর্জিও কিয়েলিনিরা। অবশেষে তাদের গোলবারে বল জড়াতে সক্ষম হলেও তাদের বিপক্ষে জয় তুলে নিতে অক্ষম হয়ে আসর থেকে বিদায় নিয়েছে ডেভিড আলাবার অস্ট্রিয়া। অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে ইতালি পেয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট।
ইতালির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান হিংসা করার মত। চলতি ইউরোতে চার ম্যাচের চারটিতেই জয়ী হয়েছে রবার্তো মানচিনির শিষ্যরা। তবে তাদের প্রতিপক্ষ নিয়ে আছে কানাঘোষা। বিশ্লেষকদের সবাই মেনে নিচ্ছেন, সজহ প্রতিপক্ষ মোকাবেলা করেছে ইতালি। দ্বিতীয় রাউন্ডে মাঝারি মানের দল অস্ট্রিয়াই ইতালিয়ান শিবিরে জ্বর এনে দিয়েছিলো। যদিও সুচিকিৎসায় সে জ্বর থেকে মুক্তি লাভ করেছে আজুরিরা।
বিজ্ঞাপন
রক্ষণে বেশি মনোযোগ দিলেও ইতালির মধ্যমাঠ কিন্তু হেলা করার মত নয়। আন্দ্রে পিরলোর ছোট ভাইয়েরা কোন ভাবেই বিলজিয়ান মিডফিল্ডারদের পায়ে খেলা নিয়ন্ত্রণ করার এখতিয়ার দিতে চাইবে না। ইংলিশ ক্লাব চেলসির হয়ে সদ্য চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ী জর্জিনহো, পিএসজি মিডিফিল্ডার মার্কো ভেরাত্তি চাইবেন খেলাটা তাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকুক।
আক্রমণে ধাঁর কম ইতালিয়ান স্ট্রাইকারদের। চিরো ইমমোবেলে লাৎসির জার্সি গায়ে যতটা উজ্জ্বল ইতালির জার্সি গায়ে ততটাই নিষ্প্রভ। একটি বা দুটি গোলের লিড পেয়ে গেলেই তাদের দায়িত্ব ষোল আনা পূরণ হয়ে যাবে।
তারায় তারায় ঢাসা দল বেলজিয়াম। চলতি আসরে ইতমধ্যে নিজেদের যোগ্যতার কিছুটা হলেও প্রমাণ দিয়েছে বিলজিয়ানরা। বিদায় করে দিয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে। কিন্তু তারাও নির্ভার থাকতে পারবে না। শেষ বলে কিছুই নেই। বাঘা বাঘা দলগুলো নাজেহাল হয়ে আসর থেকে বিদায় নিয়ে দেশে ফেরার টিকিট ধরে বিমানে উঠেছে। তাদেরও পা হড়কাতে পারে। জয়ী হয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে চাইলে মাঠের প্রতিটি অংশেই ভালো করতে হবে রবার্তো মার্টিনেজের শিষ্যদের।
বেলজিয়ান গোলবারের নিচে থাকবেন বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া। ক্লাব পর্যায়ে তিনি বিশ্বের সফল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে খেলেন । দ্বীতিয় রাউন্ডে পর্তুগীজ স্ট্রাইকারদের ৩২টি শট রুখে দেন কোর্তোয়া। কোর্তোয়া দেয়াল অতিক্রম করে বেলজিয়ামের জালে বল জড়াতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে ইতালিয়ান স্ট্রাইকারদের সেটা সহজেই অনুমেয়।
বেজিয়ান রক্ষণ হেলা করার মত নয়। নজরকারা না হলেও দলকে সুরক্ষিত রাখতে নিজেদের সর্বস্ব উজার করে দিবেন থমাস মুনিয়ার, থমাস ভারমালেনরা।
বেলজিয়াম মূলত ম্যাচটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইবে মধ্যমাঠ থেকে। তাদের দলে আছে কেভিন ডি ব্রণির মতো মিডফিল্ডার। কেভিন সময়ের সেরা মিডফিল্ডার। শুধু ইউরোপ নয়, সমগ্র বিশ্বে তার মাপের মিডফিল্ডার এখন নেই। টানা দ্বিতীয় বারের মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন তিনি। ইনজুরি নিয়ে সমস্যা থাকলেও শুরুর একাদশে নেমে নিজের সেরাটা ঢেলে দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তিনি।
হ্যাজার্ডদের ছোট ভাই জর্ডান হ্যাজার্ড; যার গোলে ভর করে বেলজিয়াম দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পেরেছে তিনিও কিন্তু বড় ভাই এডেন হ্যাজার্ডয়ের ছাঁয়া থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছেন। আজও চাইবেন ইতালিয়ান রক্ষণ ভেদ করে গোল আদায় করতে। কেভিন ও জর্ডানের সাথে থাকবেন বুরুসিয়া ডর্টমুন্ড মিডফিল্ডার ওয়াইটসেল।
রিয়াল মাদ্রিদ তারকা এডেন হ্যাজার্ডের ইনজুরি শঙ্কা রয়েছে। ইতালির ম্যাচ হাতছাড়াও হয়ে যেতে পারে ’বড় ভাই’য়ের। বেলজিয়ান সমর্থকেরা তাকে মিস করলেও খুব বেশি চিন্তিত থাকবেন না। কারন তাদের আছে একজন রোমেলু লুকাকু। লুকাকু চলতি মৌসুমে ইতালিয়াল ক্লাব ইন্টার মিলানের হয়ে সিরি-এ জিতেছেন। হয়েছেন সিরি- এ’র বর্ষ সেরা খেলোয়াড়। ইউরোতে নিজের ঝলক দেখাচ্ছেন প্রতি ম্যাচেই। এ ম্যাচেও জ্বলে উঠলে ইতালিয়ানদের কপাল পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাবে।
কাগজে-কলমে ও শক্তি মত্তায় বেলজিয়াম এগিয়ে থাকলেও কোন দল আজ জিতে সেমি-ফাইনালের টিকিট পাবে তা বলা সত্যি মুশকিল।
No comments