মামলা জটিলতায় বন্ধ সিংগাইর-মানিকনগর সড়ক সংস্কারের কাজ

 মামলা জটিলতায় বন্ধ সিংগাইর-মানিকনগর সড়ক সংস্কারের কাজ,

 দূর্ভোগে তিন লক্ষ‍‍্যাধীক লোক









 রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করে শেষ না করায় চুক্তি বাতিল। অতপর এলজিইডির মামলা। আইনি জটিলতায় আটকে আছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর-মানিকনগর রাস্তার সংস্কার কাজ। দুই বছর ধরে চরম ভোগান্তিতে উপজেলার সায়েস্তা, চান্দহর, চারিগ্রাম ও জামির্ত্তা ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার আংশিকসহ প্রায় তিন লক্ষ‍্যাধীক লোক।


ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডির সঙ্গে চলমান আইনি জটিলতায় সাধারণ লোকজনের দুর্ভোগ মেনে নিতে পারছেননা স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা প্রশ্ন করে বলেন-বছরের পর বছর মামলা চললেও কি আমরা এ দুর্ভোগ পোহাতেই থাকবো? এর জন্য দায়ী কে, আমরা কেন কষ্ট করবো? যেকোনো মূল্যে সড়কটি অতিসত্তর সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করে দিতে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তারা।


উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায় ১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ কিলোমিটার সড়কটি উন্নয়ন ও প্রশস্থকরণ প্রকল্পের টেন্ডার হয় ২০২০ সালের শুরুতে। টেন্ডারে মো.নাসির উদ্দিনের মালিকানাধীন ডলি কনস্ট্রাকশন কাজ পায় যার ঠিকানা - সেনা কল‍্যাণ ভবন,১৯৫ মতিঝিল সি/এ, ঢাকা। ওই বছর ২৫ মার্চ চুক্তি হয় যাতে উল্লেখ থাকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে। এরপরই  ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান ভেকু দিয়ে সড়কটি ভেঙ্গে সংস্কার কাজ শুরু করেন। কাজ শুরুর কিছু দিন পরই ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে দেয়। এলজিইডি থেকে কাজ শুরুর ব‍্যাপারে বার বার বলা হলেও কোন ফল হয়নি। অবশেষে কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের মে মাসে পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিটি বাতিল করে পুনরায় দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এরপরই ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে সংস্কার কাজ আইনি জটিলতায় আটকে যায়। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় দু'বছর পার হয়ে গেলেও আর সংস্কার কাজ শুরু হয়নি।


জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির সংস্কার কাজ দু'বছরেও শেষ না হওয়ায় লোকজন উপজেলা সদর হয়ে ঢাকা যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। অপর দিকে বিপাকে পড়েছেন যানবাহন চালকরাও। ইতিপূর্বে রাস্তাটির মানকিনগর থেকে পাড়াগ্রাম পর্যন্ত  সংস্কার কাজ করা হলেও বাকী থেকে যায় উপজেলা সদর থেকে মানিকনগর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ অংশ যা চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপোযোগী।


সরজমিনে দেখা গেছে এসময়ের মধ্যেই রাস্তার বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে সম্পূর্ণ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।যার কারণে প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওই রাস্তা ব‍্যবহারকারী প্রায় চার লক্ষ‍্যাধীক লোক এবং বাস, ট্রাক ও সিএনজিসহ বিভিন্ন শ্রেণীর যানবাহন। বর্তমানে মালবাহী ট্রাক ছাড়া অন‍্যান‍্য যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া আবহওয়া একটু শুস্ক হলেই ধুলোবালি কারণে মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপন দূর্বিষহ হয়ে ওঠে। এতে বিপদে পড়েছে অসুস্থ রোগী বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলারা। আর স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তির যেন শেষ নাই। স্থানীয় বাসিন্দা ও কলেজ শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের অসুবিধার বিষয় বিবেচনা করে আইনি জটিলতা কাটিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে সড়কটির মেরামত কাজ শেষ করার অনুরোধ করছি। এলাকার কৃষক হোসেন আলী বলেন, এই রাস্তার কারণে আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সাহরাইল ও সিংগাইর বাজার এবং ঢাকায় বিক্রির জন্য নিতে অনেক কষ্ট হয় এবং পরিবহন খরচও বেশি পড়ে যায়। এজন্য আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই সড়কটি খুব দ্রুত ঠিক করার অনুরোধ করছি ।


শ্যামনগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, সড়কের ধুলোবালি রান্না করা ভাত তরকারীর সাথেও মিশছে। ঢেকে রেখেও ধূলা থেকে রেহাই পাচ্ছি না। সায়েস্তা চৌরাস্তার ব্যবসায়ী আলী আহম্মদ প্রশ্ন করে বলেন, আমরা আর কতকাল ধূলা খাব, এ থেকে কি মুক্তি পাবো না? ব‍্যবসায়ী মোঃ আওলাদ হোসেন বলেন, আমাদের দূর্ভোগ লাগবে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি খুব দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করা জরুরী।


একাধিক সিএনজি চালক অভিযোগ করে বলেন , রাস্তাটি খানাখন্দের কারণে উচুঁ-নিচু হওয়ায় ৬ মাসেই তাদের  গাড়ী পুরাতন হয়ে যায় । দ্রুতই যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। গাড়ির চাকা ভেঙে যায় এবং  প্রায়ই সিএনজি উল্টে গিয়ে ইঞ্জিনের ক্ষতি হয়। তাই যা ইনকাম করি তা গাড়ী ঠিক করতেই চলে যায়। পরিবার নিয়ে চলারমতো অবশিষ্ট কোন টাকা পয়সা হাতে থাকে না। তাই রাস্তাটির মেরামত কাজ দ্রুত শেষ করা দাবি করেন তারা ।


এ প্রসঙ্গে ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান ডলি কনস্ট্রাকশনের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে পত্রিকায় লেখালেখি না করায় ভালো। তারপর তিনি অভিযোগ করে বলেন-উপজেলা প্রৌকশল অফিস থেকে আমার পরিক্ষিত ইট, বালু তাদের দিক থেকে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে কৌশলে কালক্ষেপন করলে ইটের কাজ শুরূ করতে বিলম্ব হয়। এরই মধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষের দিকে চলে আসলে ১০ শতাংশ সিকিউরিটির টাকা বাজেয়াপ্ত করতে চাইলে আমি কোর্টে মামলা করি।


এ ব‍্যাপারে উপজেলা প্রৌকশলী রুবাইয়েত জামান বলেন , ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের পরও কাজ শেষ না করায় আমরা চুক্তি বাতিল করি। আইনি জটিলতায় কাজ বন্ধ থাকায় জনসাধারণের দুর্ভোগে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কিছু করার নেই। আইনি জটিলতা সমাধান এবং পুনরায় কাজ শুরু করার জন্য কর্তৃপক্ষে‍র সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্থা গ্রহণ করবো ।


বার্তা প্রেরক

মোঃ সাইফুল ইসলাম তানভীর

দৈনিক দেশ রুপান্তর 


সিংগাইর, মানিকগঞ্জ।


মোবাইল-০১৭১৬ ৪৪৪ ২৭৪


তারিখ ১৪.০৩.২০২২

No comments

Auto Scroll Stop Scroll