অলিম্পিক ফুটবলঃ ব্রাজিল বনাম মেক্সিকোঃ প্রত্যয়ী ব্রাজিলের সামনে উদ্বিপ্ত মেক্সিকো
ব্রাজিল বনাম মেক্সিকোঃ প্রত্যয়ী ব্রাজিলের সামনে উদ্বিপ্ত মেক্সিকো
ব্রাজিলের সব আছে শুধু অলিম্পিকে সোনা নেই, এই আক্ষেপ তারা ঘুঁচিয়েছে গত অলিম্পিক আসরে। অলিম্পিক সোনার জন্য তারা এতটাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল যে, নেইমার কোপা আমেরিকা বাদ দিয়ে অলিম্পিকে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে এই আসরেও তারা কম দৃঢ় প্রতিজ্ঞ নয়। এবার তারা সোনা ধরে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আর এজন্য দলে অর্ন্তভূক্ত করেছে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার দানি আলভেজ, এভারটন তারকা রিচালাসানকে ।
উত্তর আমেরিকfর দেশ মেক্সিকো অলিম্পিকে নতুন নয়। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে এই ব্রাজিলকে হারিয়েই প্রথম কোন মেজর আসরের ফাইনাল জিতেছিল মেক্সিকো। মেক্সিকোর জন্য প্রথম কোন শিরোপা বা পদকও ছিল সেটা । ফাইনালে যেহেতু ব্রাজিলকে হারানোর অভিজ্ঞতা মেক্সিকোর আছে, সেমিফাইনালেও তারা ব্রাজিলকে হারিয়ে নতুন করে চমক সৃষ্টি করতেই পারে।
টানা দ্বিতীয় বারের মত অলিম্পিক ফুটবলের ফাইনালে যাবে ব্রাজিল নাকি মেক্সিকো তাদের সেই পথে বাধাঁ হতে পারবে, তা জানা যাবে ৩রা আগস্ট বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় মেক্সিকো বনাম ব্রাজিলের মধ্যকার প্রথম সেমিফাইনালে।
পজিশন অনুযায়ী দুই দলের শক্তিমত্তাঃ
গোলকিপিংঃ
ঝাকড়া চুলের গুলের্মো ওচুয়া সামলাবেন মেক্মিকোর গোলবার। ওচুয়া সবার নজরে আসেন ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে । মেক্মিকোর হয়ে একের পর এক গোল আটকে নায়ক বণে গিয়েছিলেন তিনি। ৩৬ বছর বয়সী ওচুয়া থাকবেন মেক্সিকান গোলাবারে নিচে। মেক্মিকোর অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনিও থাকবে তার হাতে। ভাবাই যায় ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারদের ভালই পরীক্ষা দিতে হবে।
ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার সান্তোস একটু হলেও ওচুয়ার চেয়ে পিছিয়ে থাকবেন। ৩১ বছর বয়সী সান্তোস খেলেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব আতঁলেতিকো প্যারানেইসে। ব্রাজিলের হয়ে চলতি ওলিম্পিকে প্রতিটি ম্যাচেই খেলেছেন সান্তোস। । চলতি আসরে মেক্সিকান স্ট্রাইকারদের গোল পরিসংখ্যান দেখে সান্তোস অবশ্য ভয় পেতেই পারেন। তিনি প্রাণপণে লড়ে যাবেন নিজ গোলবার অক্ষত রাখতে।
রক্ষণভাগঃ
রক্ষণে মেক্সিকোর চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে থাকবে ব্র্রাজিল। ৩৮ বছর বয়স্ক দানি আলভেস থাকেবেন ব্রাজিলের রক্ষণের মূলভাগে।নিজের ক্যারিয়ারের ৪৪তম শিরোপা জয়ের আর মাত্র দুই ম্যাচ দূরে আলভেস।
অভিজ্ঞ সেভিয়া ডিফেন্ডার ডিয়াগো কার্লোস আর তরুর নিনো ও আরানাকে নিয়ে এক দুর্ভেদ্য দেয়াল তৈরি করবেন দানি আলভেস। চলতি আসরে ৪ ম্যাচে তারা হজম করেছে মাত্র ৩টি গোল। কোয়ার্টার ফাইনালে মিশরের জালে ১টি গোল জড়িয়ে ভালো ভাবে রক্ষা করেছেন নিজেদের জাল।
অভিজ্ঞতায় ব্রাজিলের তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও মেক্সিকান ডেফেন্ডাররা ছেড়ে কথা বলবেন না। চলতি আসরে ৪ ম্যাচে তারা গোল হজম করেছে ৬টি। কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিন কোরিয়ার বিপক্ষে টানা দুইবার পিছিয়ে পরে তারা। কিন্তু আবার ঘুরে দাড়িয়ে ঠিকই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে।গ্রুপ পর্বে তারা বিদায় করে দিয়েছে ফ্রাঞ্চের মত দলকে, কোয়ার্টার ফাইনালে এশিয়ান শক্তি দক্ষিন কোরিয়াকে। দুর্দান্ত মনোবল নিয়ে তারা মোকাবেলা করবে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারদের।
মধ্যমাঠঃ
ব্রাজিলের মধ্যমাঠ তারাকায় ঠাসা। ব্রাজিল অবশ্য বরাবরই তারাকায় ঠাসা দল। মধ্যমাঠই মূলত ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দিয়ে জয় তুলে আনতে বড় ভূমিকা রাখে। এস্টন ভিলা মিডফিল্ডার ডগলাস লুইস, অলিম্পিক লিঁও মিডফিল্ডার ব্রুনো গুমারেস, ব্রাজিলিয়ান ক্লাব রেডবুল ব্রাজেন্টিনো মিডফিল্ডার ক্লাদিনহো মধ্যমাঠের নিয়ন্ত্রণ ভালই রাখছেন। তাদের বল দখল ও গোলের সুযোগ তৈরি করার সক্ষমতা অনেক বেশি।
লুইস রোমো ও সেবাস্তিয়ান কোর্ডোভা মেক্সিকোর মধ্যমাঠের প্রাণ। দক্ষিন কোরিয়ার বিপক্ষে যখন মেক্সিকো বার বার বল দখলে পিছিয়ে পড়ছিল,গোল ব্যাবধানেও পিছিয়ে পড়ছিল তখন রোমো ও কোর্ডোভা দুজনেই গোল করেন ও গোলে সহায়তা করেন। ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের রাখতে হবে বড় ভূমিকা।
আক্রমণঃ
ব্রাজিলের আক্রমনের মূল কারিগর হতে পারেন এভারটন তারকা রিচালিসান। ব্রাজিলের হয়ে উদ্ধোধনী ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে হ্যাট্রিক করেন তিনি। আসরে তার মোট গোল ৫টি।
বার্সেলোনার সাবেক স্ট্রাইকার ম্যালকম বর্তমানে তিনি রুশ ক্লাব জেনিত সেন্ট পিটার্সবুর্গে খেলছেন। সৃজনশীলতায় তিনিও পিছিয়ে নেই। গোল করার চেয়ে গোলের সুযোগ তৈরিতে বেশি দক্ষ ম্যালকম। এছাড়াও রয়েছন আর্সেনাল স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল মার্তেনেল্লি।
গ্রুপ পর্ব ও কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল করেছে ৮ গোল, আসরে যা তৃতীয়। গ্রুপ পর্বে তারা জার্মানিকে দিয়েছিল ৪ গোল । এছাড়া অন্য ম্যাচগুলোতে অবশ্য খুব বেশি গোলের দেখা পায়নি।
চলতি আসরে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে মেক্সিকো। ৪ ম্যাচে তাদের মোট গোল ১৪ টি। তাদের গোল করার প্রবণতা দেখে বোঝাই যাচ্ছে দারুন ফর্মে আছেন মেক্সিকান স্ট্রাইকাররা। হেনরি মার্টিন ও ফ্রান্সিকো কোর্ডোভা দুজনেই করেছেন ৩টি করে গোল। তবে ব্রাজিলিয়ান রক্ষণকে ভেদ করে গোল আদায় করা তাদের জন্য কষ্টদায়ক হলেও অসম্ভব নয়।
মেক্সিকো এই ম্যাচে আন্ডারডগ হিসেবে খেলবে। ব্রাজিলের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। আমার স্কোর লাইন মেক্সিকো ২- ৩ ব্রাজিল।
No comments